মৈনট ঘাট

দোহার উপজেলার মৈনট ঘাট (Moinot Ghat Dhaka) কে ডাকা হয় মিনি কক্সবাজার নামে। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে সোজা একটি রাস্তা এসে মিলেছে দোহারের মৈনট ঘাটে। পদ্মার এক পাড়ে দোহার আর অপর পাড়ে ফরিদপুর। মৈনট ঘাট থেকে মানুষ পদ্মা পাড় হয়ে ফরিদপুরের গোপালপুর যায়। ঘাটের পূর্ব পাশে বিশাল চর মানুষকে সাগরের বেলাভূমির কথা মনে করিয়ে দেয় আর সামনের বিস্তীর্ণ পদ্মা হয়ে যায় সাগর। আর চাইলে এখান থেকে নৌকায় করে পদ্মা নদীতে ঘুরে বেড়ানো যায় কিংবা পাড় ধরে হাটা যায় ইচ্ছে মত।

ঢাকার কাছেই ভ্রমনের জন্য জায়গা খুজছেন তাদের অন্যতম প্রিয় একটি জায়গা দোহারের মৈনট ঘাট। রাজধানী থেকে দিনে গিয়ে দিনেই বেড়িয়ে আসা যায়। দোহারের পদ্মার পাড়ের এই এলাকা/জায়গা এরই মধ্যে বেড়ানোর জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

যেখানে গেলে আপনি আসলেই মুগ্ধ হবেন আর তাকিয়ে থাকবেন পদ্মার অপরূপ জলরাশির দিকে। পদ্মার বিশাল জলরাশি, আর বিশাল পদ্মায়  হেলেদুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা দেখা আর পদ্মার তীরে হেঁটে বেড়ানো, সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি এখন ঢাকার দোহারে নয়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছেন। মূলত এ জন্যই অনেকে মৈনট ঘাটকে মিনি কক্সবাজার(Mini Cox’s Bazar Moinot Ghat) বলে থাকেন।

নানান কারণে মৈনট ঘাট এখন ঢাকার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ ঘাটের আশপাশে বিশেষ করে পূর্ব পাশে বিশাল চর আর সামনে বিস্তীর্ণ পদ্মা। এখানে এসে দুই পাশের চর দেখে চর দেখে অনেকেরই ভুল মনে হতে পারে। এটি কী নদীর চর, নাকি সমুদ্রের কোনো বেলাভূমি! এখান থেকে পদ্মা নদীতে নৌকায় ঘুরেও বেড়ানো যায় পাড় ধরে। এছাড়া এখানে মৌসুমে প্রচুর রং-বেরঙ্গের পালতোলা নৌকাও দেখা যায়।

মৈনট ঘাট দর্শনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। তখন রাস্তার দুই পাশের নিম্নভূমি, যেখানে বর্ষার আগে বিস্তীর্ণ ভূমিজুড়ে বাদামের চাষ করা হয়, আর সবই বর্ষায় পদ্মার পানিতে তলিয়ে যায়। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। বর্ষার আগে এর সৌন্দর্যের কমতি নেই। তখন দেখা যাবে পদ্মা নদীর শান্ত রূপ। একটা সন্ধ্যায় পদ্মা নদীতে সূর্যাস্ত দেখলে পরবর্তী একশোটা সন্ধ্যার কথা মনে থাকবে আপনার। আমাদের প্রধান প্রধান উৎসবের দিনগুলোতে মানুষ এখানে আসছে, ঘুরছে।

মৈনট ঘাটে পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্রলার, খেয়া নৌকার পাশাপাশি আছে স্পিড বোটও। আট জন চড়ার উপযোগী একটি বোটের ভাড়া ত্রিশ মিটিটের জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া ছোট বড় নানান আকারের ইঞ্জিন নৌকাও আছে। আড়াইশ থেকে ৮শ’ টাকা ঘণ্টায় এসব ইঞ্জিন নৌকায় চার থেকে ২০/২৫ জন একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানো যায়।

তবে পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে দুতিন ঘণ্টার জন্য ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে মৈনট ঘাটের কোলাহল ছেড়ে একটু দূর থেকে ঘুরে আসাই ভালো।

মৈনট ঘাটে বেড়াতে গিয়ে পদ্মার মাছও কেনার সুযোগ আছে। নৌকা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখা হওয়া জেলে নৌকা থেকে মাছও কিনতে পারেন। তবে পদ্মার সেই টাটকা মাছের স্বাদ নিতে হলে দাম বেশ কিছুটা বেশিই গুনতে হবে।

মৈনট ঘাট ও পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দিনের দ্বিতীয়ভাগই ভালো। সেখানে সূর্যাস্ত না দেখে ফেরা উচিৎ হবে না।

তবে সারা দিনের একটি ভ্রমণ সূচী করে দিনের প্রথম অংশে বেড়াতে পারেন ঢাকার নবাবগঞ্জের প্রাচীন স্থাপনা ও স্থানগুলোতে।

সকালে ঢাকা থেকে বেড়িয়ে প্রথমে দেখে নিন নবাবগঞ্জের কলাকোপার ঐতিহাসিক গান্ধী মাঠ, প্রাচীন প্রাসাদ, এন হাউজ, জগবন্ধু সাহা হাউজ এবং খেলারাম দাতার বাড়ি। এছাড়া নবাবগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন জজ বাড়ি ও উকিলবাড়ি দেখতেও ভুল করবেন না। ঢুঁ মারতে পারেন বান্দুরার জপমালা রাণীর গির্জায়ও। তাই ঢাকাবাসীরা চাইলে খুব সহজেই দোহারের এই ছোট কক্সবাজার মৈনট ঘাটে একটা ডে ট্রিপ দিতে পারেন।

Scroll to Top
Scroll to Top