বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ এবং সিলেট জেলা নিয়ে গঠিত সিলেট বিভাগ। সিলেট বিভাগ মূলত চা বাগানের জন্য বিখ্যাত হলেও এর উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণদিকে উঁচু উঁচু পর্বত শ্রেণীর আর পাহাড়ী অঞ্চল মেঘালয়া, খাসিয়া, জয়ন্তীয়া, ত্রিপুরার পাহাড়ের মাঝামাঝি বিস্তীর্ণ এলাকাটিতে বিভিন্ন জলপ্রপাত, নদী ও হাওর থাকায় এই বিভাগে সব সময় পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। যার অপরূপ প্রকৃতির লীলা নিকেতন সিলেট ভ্রমনে পর্যটকদের টেনে আনে বার বার।
সিলেট উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের একটি প্রধান শহর, একই সাথে এই শহরটি সিলেট বিভাগের বিভাগীয় শহর। এটি সিলেট জেলার অন্তর্গত। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকাই মূলত সিলেট শহর হিসেবে পরিচিত। সিলেট ২০০৯ সালের মার্চ মাসে একটি মেট্রোপলিটন শহরের মর্যাদা লাভ করে। সুরমা নদীর তীরবর্তী এই শহরটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ শহরটি দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। সিলেট অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সকল অর্থমন্ত্রী ছিলেন সিলেটি। শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক ভাবে সিলেট দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ধনী জেলা। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ, বিছনাকান্দির স্বচ্ছ জলরাশি পর্যটকদের টেনে আনে বার বার। এ শহরের বিশাল সংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। সিলেটের পাথর, বালুর গুণগতমান দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এখানকার প্রাকৃতিক গ্যাস সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে । স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার ভূমিকা অপরিসীম। জেনারেল এম,এ,জি ওসমানী এ জেলারই কৃতী সন্তান। হযরত শাহজালাল (র:) ও হযরত শাহ পরান এর পবিত্র মাজার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করে। আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক। সিলেট এর স্থানীয় ভাষা ‘‘সিলটি ভাষা’’র একটি বিশেষত্ব রয়েছে যা অন্য অঞ্চল থেকে আলাদা। এ ছাড়া নাগরী বর্ণমালা নামে সিলেটের নিজস্ব বর্ণমালা ও রয়েছে। শীত মৌসুমে সিলেটের হাওর গুলো ভরে ওঠে অতিথি পাখির কলরবে।
সিলেট দর্শনীয় স্থান সমূহ
সিলেট শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থানসমূহ হলো:
- আরকুম আলীর মাজার
- আলী আমজদের ঘড়িঘর
- এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড
- এম. এ. জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ
- এমসি কলেজ
- ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
- ওসমানী শিশু পার্ক
- ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর
- কাস্টম ঘাট
- কীন ব্রিজ
- গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার
- গায়েবী মসজিদ
- চাপরা বিল
- জাকারিয়া সিটি
- জাফলং
- জিতু মিয়ার বাড়ী
- জৈন্তিয়া রাজবাড়ী
- টিলাগড় ইকো পার্ক
- ড্রিমল্যান্ড পার্ক
- তামাবিল
- আমলশীদ পয়েন্ট
- দুর্গাবাড়ী মন্দির
- নাজিমগড় রিসোর্ট
- পরীকুন্ড ঝর্ণা
- পর্যটন মোটেল
- পান্তুমাই ঝর্ণা
- ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা
- বিছনাকান্দি
- ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারী
- মদন মোহন জিউ আশ্রম
- মনিপুরী জাদুঘর
- মনিপুরী রাজবাড়ি
- মালনীছড়া চা বাগান
- রাতার গুল দ্বীপ
- রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
- রামধানা শাহী ঈদগাহ
- রায়েরগাঁও হাওড়
- লাক্কাতুরা চা বাগান
- লালাখাল
- লোভাছড়া চা বাগান
- লোভাছড়া পাথর কোয়ারী
- শাহ পরাণের মাজার
- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- শাহী ঈদগাহ
- শ্রী চৈতন মহাপ্রভুর পৈতৃক নিবাস
- শ্রীচৈতন্যদেব মন্দির
- সাতছড়ি উদ্যান
- সুতারকান্দি স্থল বন্দর
- সোনাতলা পুরাতন জামে মসজিদ
- হযরত শাহজালালের দরগাহ
- হাকালুকি হাওড়
- হাছন রাজার বাড়ী
- হাছন রাজার মিউজিয়াম
- হারং হুরং
হবিগঞ্জ জেলা
- অমৃত মন্দির
- আজমিরীবাবার মাজার
- আলিয়া খাসিয়াপুঞ্জী
- কমলারাণীর সাগরদীঘি
- শংকরপাশা শাহী মসজিদ
- ইমাম চা বাগান
- তেলিয়াপাড়া চা বাগান
- নাগুরা ফার্ম
- পুরাতন সার্কিট হাউজ ভবন
- প্যালেস রিসোর্ট
- ফ্রুটস ভ্যালী
- বাওয়ানী চা বাগান
- বাঘাসুরা রাজবাড়ী
- বানিয়াচং রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ
- বায়েজিদ শাহের মাজার
- বাহুবল জামে মসজিদ
- বিথঙ্গল আখড়া
- বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড
- মশাজানের দিঘী
- মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ
- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ, তেলিয়াপাড়া
- রঘুনন্দন চা বাগান
- রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড
- রুপাইছড়া রাবার বাগান
- রেমা ক্যালেঙ্গা বন্য প্রানী অভয়ারণ্য
- লক্ষীবাওর জলাবন
- শচী অঙ্গন ধাম মন্দির
- শাহ ইছাক চিশতি (রঃ) এর মাজার
- শাহ মজলিশ আমীন (রাঃ) এর মাজার
- শাহ সোলেমান ফতেহগাজী র: মাজার
- শাহজীবাজার রাবার বাগান
- শেখ ভানু শাহের মাজার
- শ্যাম বাউল গোস্বামীর আখড়া
- সাতগাঁও রাবার বাগান
- সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
- সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) এর মাজার
- সুরমা চা বাগান।
- হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড
মৌলভীবাজার জেলা
- দেওড়াছড়া বদ্ধভূমি
- বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট
- মাধবকুন্ড ইকোপার্ক
- মাধবকুন্ড জলপ্রপাত
- মৌলভীবাজার পৌরসভা
- লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক
- শ্রীমঙ্গল
- সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা
- হাকালুকি হাওড়
- হাম হাম জলপ্রপাত
- কমলা রাণীর দিঘী
- কাউয়াদিঘী হাওড়
- খোঁজার মসজিদ
- গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ
- চা জাদুগর
- ছয়ছিরি দিঘী
- দেওড়াছড়া চা বাগান
- দেশের ৯৫টি চা বাগান
- পৌর পার্ক
- প্রেমনগর চা বাগান
- বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক
- বাইক্কা বিল
- মনিপুরী পাড়া
- মাথিউড়া লেক
- মাধবপুর লেক
- মির্জাপুর চা বাগান
- মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মাঠ
- রাজনগর চা বাগান
- শফিনগর চা বাগান
- শহীদ মিনার ও গণকবর
- হযরত শাহ মোস্তফা রহঃ এর মাজার
- হাইল হাওড়
জাফলং
জাফলং সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান যা গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। সিলেট থেকে জাফলং এর দুরত্ব মাত্র ৬২ কিলোমিটার। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য। ঋতুভেদে জাফলং একেক রকম রুপ প্রকাশ করে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে সমধিক পরিচিত যা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। পাথারিয়া পাহাড় (পূর্বনাম: আদম আইল পাহাড়) কঠিন পাথরে গঠিত; এই পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। এই ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে হয়েছে মাধবছড়া। অর্থাৎ গঙ্গামারা ছড়া হয়ে বয়ে আসা জলধারা [১২ অক্টোবর ১৯৯৯-এর হিসাবমতে] প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়ে মাধবছড়া হয়ে প্রবহমান। সাধারণত একটি মূল ধারায় পানি সব সময়ই পড়তে থাকে, বর্ষাকাল এলে মূল ধারার পাশেই আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পানির তীব্র তোড়ে। জলের এই বিপুল ধারা পড়তে পড়তে নিচে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট কুণ্ডের। এই মাধবছড়ার পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মিশেছে হাকালুকি হাওরে।
কুণ্ডের ডানপাশে পাথরের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে একটি গুহার, যার স্থানীয় নাম কাব। এই কাব দেখতে অনেকটা চালাঘরের মতো। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে স্নানর্থীরা কাবের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজা কাপড় পরিবর্তন করে থাকেন
টিলাগড় ইকোপার্ক
টিলাগড় ইকোপার্ক বাংলাদেশের সিলেট জেলার টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত দেশের তৃতীয়[১] ইকোপার্ক। টিলাগড় ইকোপার্কটি কয়েকটি ছোট ছোট টিলা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। এই ইকোপার্কের ছোটবড় টিলার মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে একটি ছড়া। ইকোপার্কটিতে রয়েছে ঘন গাছ-গাছালি। এখানে বেশকিছু ফল গাছের পাশাপাশি রয়েছে জীববৈচিত্রের সমাহার। এখানে রয়েছে পিকনিক কর্নার এবং শিশুদের জন্য চিলড্রেন’স কর্নার। বিষুবরেখা অঞ্চলে অবস্থিত এই চিরসবুজ জায়গাটিতে লাক্কাতুরা চা বাগান ছাড়াও রয়েছে শেভরন গ্যাসক্ষেত্র।
সিলেট শহরে হযরত শাহজালালের [রহ.] মাজার
সিলেট শহরে হযরত শাহজালালের [রহ.] মাজার
শাহ জালালের দরগাহ, সিলেট শহরের একটি আধ্যাত্মিক স্থাপনা, যা মূলত ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে আগত পাশ্চাত্যের ইসলাম ধর্মপ্রচারক শাহ জালালের বাসস্থান ও শেষ সমাধি। এই দরগাহ সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে একটি টিলার উপর অবস্থিত। কারো কারো মতে সিলেট ভূমির মুসলিম সভ্যতা ও ধর্মমত এই দরগাহকে কেন্দ্র করে প্রসার লাভ করেছে। শাহ জালালের লৌকিক ও অলৌকিক স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান সিলেটের অন্যতম পূণ্য তীর্থ হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক অচ্যুৎচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির মতে এই দরগাহ থেকে প্রেরিত শাহ জালালের সঙ্গী অনুসারীদের দ্বারা ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা, কুমিল্লা ও আসাম প্রভৃতি স্থানে মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাৎসরিক উরস (স্থানীয় উচ্চারণ: উরুস) উপলক্ষে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক এখানে এসে শাহ জালালের উপলক্ষ ধরে (অসিলা) স্রষ্টার কাছে ভক্তি নিবেদন ও কৃতজ্ঞতা জানান
হজরত শাহপারান (রঃ) মাজার
শাহ পরাণের মাজার সিলেট শহরের একটি পুণ্যতীর্থ বা আধ্যাত্মিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি।এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত।
শাহ জালাল (রঃ) দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কি।মি। দূরে শাহ পরান (রঃ) এর মাজার অবস্থিত।শাহ জালাল (রঃ) দরগাহের মতো এখানেও প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মাজারজিয়ারত করার জন্য পূণ্যময় সিলেট ভ্রমণে আসেন।মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছেসমাধিটি। ঐতিহাসিক মুমিনুল হকসহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরাণের দ্বারা মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে।
বিছানাকান্দি – সিলেট
মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা সৃষ্টি করেছে এক মনোরম পরিবেশ। যা হতে পারে ভ্রমণ পিপাসীদের জন্য এক আকর্ষনীয় স্থান। একটি কাঠের ব্রিজ বাংলাদেশের বর্ডারের মধ্যে পড়েছে যা পানি প্রবাহের বিপরীত দিকে অবস্থিত উচ্চভুমি আর সমতল ভূমির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজ করে। এর ফলে আদিবাসীদের গবাদীপশু চারনের বিশেষসুবিধা হয়েছে। পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ নিয়েই যেন বিছানাকান্দি। এখানে আসার পর যে কথাটি সর্বপ্রথম মনে হয় তা হল প্রশান্তি। এই প্রশান্তিটুকু নিমিষেই ভুলিয়ে দেয় প্রতিদিনকার শত গ্লানি। প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানতেই হয় নাগরীক সভ্যতাকে। আর এই চরম সত্যটুকু উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে চলে আসতে হবে বিছানাকান্দিতে। জাফলং এর মত বিছানাকান্দিও একটি খনি এলাকা। পাথর বোঝাই নৌকা, ট্রাকের আনাগোনা এবং পাথর উত্তোলনের কারনে শীতকাল বিছানাকান্দিতে আসার জন্য একেবারেই উপযুক্ত সময় নয়। আর তা ছাড়া বর্ষার সময়ে বিছনাকান্দি পূর্ণযৌবন ফিরে পায়।
লালাখাল
মেঘালয় পর্বত শ্রেনীর সবচেয়ে পুর্বের অংশ জৈন্তিয়া হিলসের ঠিক নীচে পাহাড়, প্রাকৃতিক বন, চা বাগান ও নদীঘেরা একটি গ্রাম লালাখাল, সিলেট জেলার জৈন্তিয়াপুর উপজেলায়। জৈন্তিয়া হিলসের ভারতীয় অংশ থেকে মাইন্ডু ( Myntdu) নদী লালাখালের সীমান্তের কাছেই সারী নদী নামে প্রবেশ করেছে এবং ভাটির দিকে সারীঘাট পেরিয়ে গোয়াইন নদীর সাথে মিশেছে। লালাখাল থেকে সারীঘাট পর্যন্ত নদীর বারো কিমি পানির রঙ পান্না সবুজ- পুরো শীতকাল এবং অন্যান্য সময় বৃষ্টি না হলে এই রঙ থাকে। মুলতঃ জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আসা প্রবাহমান পানির সাথে মিশে থাকা খনিজ এবং কাদার পরিবর্তে নদীর বালুময় তলদেশের কারনেই এই নদীর পানির রঙ এরকম দেখায়।সারীঘাটে নাজিমগডরিসোর্টএরএকটি বোট স্টেশন আছে। এখান থেকে ও বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে লালাখাল যাওয়া যায়। লালাখালে সারী নদীর তীরে নাজিমগড়ের একটি মনোরম রেস্টুরেন্ট রয়েছে- ‘রিভার কুইন’ । সব অতিথিদের জন্যই এটি উন্মুক্ত। রিভারকুইন রেস্টুরেন্টের পাশেই রয়েছে ‘এডভেঞ্চার টেন্ট ক্যাম্প ‘ । এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা এখানে রাত্রিযাপন করতে পারেন। নদীপেরিয়ে লালাখাল চা বাগানের ভেতর দিয়ে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা হাঁটার পথ ( ট্রেকিং ট্রেইল) । এছাড়া পেছনে পাহাড়ের ঢাল ও চুঁড়োয় গড়ে উঠেছে নাজিমগড়ের বিলাসবহুল নতুন রিসোর্ট ‘ওয়াইল্ডারনেস’। আবাসিক অতিথি ছাড়া এখানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। সরাসরি গাড়ী নিয়ে ও লালাখাল যাওয়া যায়। সারী ব্রীজ় পেরিয়ে একটু সামনেই রাস্তার মাঝখানে একটি পুরনো স্থাপনা।এটি ছিলো জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজকুমারী ইরাবতীর নামে একটি পান্থশালা। এর পাশ দিয়ে হাতের ডানের রাস্তায় ঢুকে সাত কিমি গেলেই লালাখাল। লালাখাল এ রিভার কুইন রেস্টুরেন্ট এর সামনে থেকে ও নৌকা নিয়ে জিরোপয়েন্ট ঘুরে আসা যায়।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ বিশেষ করে বর্ষাকালে সিলেট থেকে লালাখাল পর্যন্ত ভ্রমন এক অনন্য অভিজ্ঞতা। সড়কের পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল খাসিয়া পর্বত, ঘনসবুজে ঢাকা। এই সবুজের মধ্যে সাদা মেঘের দূরন্ত খেলা আর অনেকগুলো ঝর্ণার উচ্ছ্বাস।যদি ও শীতকালেই পর্যটক সমাগম বেশী হয় কিন্তু এই অঞ্চলের পাহাড়ের সবুজ, মেঘ ও ঝর্ণার প্রকৃত সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায় বর্ষাকালে। সিলেটে বর্ষা সাধারনতঃ দীর্ঘ হয়। সেই হিসেবে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রমনের উপযুক্ত সময়।
মৌলভীবাজার জেলার ও জনপদ শ্রীমঙ্গল
মৌলভীবাজার জেলার প্রাচীন ও অন্যতম জনপদ শ্রীমঙ্গল। বিশেষ করে চায়ের জন্য স্থানটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে পরিচিত। প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো এ চায়ের জনপদে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে টি রিসোর্ট ও মিউজিয়াম (Sreemangal Tea Resort and Museum) গড়ে উঠেছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ টি বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় চা গবেষণা কেন্দ্রের কাছে উঁচু-নিচু টিলা ও চা বাগান ঘেষে টি রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে এ এলাকাটি একসময় বৃটিশ কারিগরি নামে ব্যাপক পরিচিত ছিল। ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল রুহুল আমিন টি রিসোর্টের দুটি বাংলোর ৪টি কক্ষ নিয়ে এই টি রিসোর্ট ও মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন। মিউজিয়ামটিতে মূলত দেড়শ’ বছর আগে বৃটিশদের শাসন আমলে চা বাগানের বাবু (ম্যানেজার) এবং ভারতের উড়িষ্যা প্রদেশ থেকে আসা চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও মুদ্রা রয়েছে। পাশাপাশি স্বাধীনতার আগে চা বোর্ডের দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত একটি টেবিল ও চেয়ার মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে। এছাড়া রয়েছে বৃটিশ আমলে চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিশেষ কম্পাস, ঘড়ি, পাম্প টিউবওয়েল, খাট, টেবিল, আয়রন বেম্ব স্টিক, পানির ফিল্টার, চা গাছের মোড়া ও টেবিল, পাথর হয়ে যাওয়া গাছের খ-, প্রোনিং দা, প্লান্টিং হুক, দিক নির্ণয় যন্ত্র, ফসিল, লোহার পাপস, ফ্যান, নারী শ্রমিকদের ব্যবহৃত গহনা, কাটা কুদাল, টাইপ রাইটার, লোহার ফ্রেম টেবিল, প্রনিং নাইফ, ইলেকট্রিক ফ্যান, সার্ভে চেইন, রেডিও, কেরোসিন চালিত ফ্রিজ, সিরামিক ঝাড়, রাজনগর চা বাগানের নিজস্ব কয়েন, লন্ডন থেকে আনা ওয়াটার ফিলটার, রিং কোদাল, তীর ধনুকসহ দুর্লভ আসবাবপত্র।
বিছানাকান্দি
বিছানাকান্দি ( Bisnakandi / Bichnakandi) ভারত এবং বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় অবস্থিত। বিছনাকান্দি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে থাকা লাল পতাকাগুলোর সারি জানান দেয় যে ওপাশেই ভারত। এখান থেকে সহজেই ভারতীয় জলপ্রপাত গুলো দেখা যায় যা থেকে পানি বয়ে আসে বিছানাকান্দি পর্যন্ত।
মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা সৃষ্টি করেছে এক মনোরম পরিবেশ। যা হতে পারে ভ্রমণ পিপাসীদের জন্য এক আকর্ষনীয় স্থান। একটি কাঠের ব্রিজ বাংলাদেশের বর্ডারের মধ্যে পড়েছে যা পানি প্রবাহের বিপরীত দিকে অবস্থিত উচ্চভুমি আর সমতল ভূমির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজ করে। এর ফলে আদিবাসীদের গবাদীপশু চারনের বিশেষসুবিধা হয়েছে।
পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ নিয়েই যেন বিছানাকান্দি। এখানে আসার পর যে কথাটি সর্বপ্রথম মনে হয় তা হল প্রশান্তি। এই প্রশান্তিটুকু নিমিষেই ভুলিয়ে দেয় প্রতিদিনকার শত গ্লানি। প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানতেই হয় নাগরীক সভ্যতাকে। আর এই চরম সত্যটুকু উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে চলে আসতে হবে বিছানাকান্দিতে।
শিয়ালদহ কুঠিবাড়ি
ঐতিহাসিক স্থান
দেশে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- জাতির পিতার সমাধিসৌধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, জাতীয় কবির সমাধিসৌধ, কার্জন হল, নর্থব্রুব হল, বলধা গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পুরাতন হাইকোর্ট ভবন, বাহাদুর শাহ পার্ক, দীঘাপতিয়া রাজবাড়ি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কবরস্থান, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, সাগরদাঁড়ি, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, ত্রিশাল ও গান্ধী আশ্রম।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ধর্মীয় স্থাপনা
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- মহাস্থানগড়, ময়নামতি, সোনারগাঁও, পানাম সিটি, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, লালবাগ কেল্লা, উয়ারি-বটেশ্বর, ভিটাগড়, বড় কাটরা, ছোট কাটরা, জগদ্দলা মহাবিহার, নোয়াপাড়া-ঈশানচন্দ্রনগর, আহসান মঞ্জিল। ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে ধানমন্ডিতে মোগল ঈদগাহ, ষাটগম্বুজ মসজিদ, বাঘা মসজিদ, কান্তজির মন্দির, বুদ্ধ ধাতু জাদি, আর্মেনিয়ান গির্জা অন্যতম